দান করা, বাজেট তৈরি, অর্থ সঞ্চয়, দান করা ও কম্পাউন্ড ইন্টারেস্ট সম্পর্কে জানানোর মতো সহজ কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার মাধ্যমে সন্তানকে প্রাথমিক পর্যায়ের অর্থনৈতিক শিক্ষা প্রদান করা যায়। কিন্তু প্রশ্ন দাঁড়ায়, অভিভাবকগণ কাজটা কীভাবে করবেন? ছোট বাচ্চার সাথে টাকা-পয়সা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা বলা একটু কঠিন বৈকি। এরচেয়ে বরং সাইকেল চালানো শিখিয়ে দেওয়া বা সাঁতার শেখানো সহজ।
উন্নত দেশগুলোতে গবেষণা করে দেখা গেছে, অভিভাবকরা সন্তানের সাথে অর্থ সংক্রান্ত সিরিয়াস আলাপ করার চেয়ে যৌনতা ও মাদকের মতো স্পর্শকাতর বিষয়গুলো নিয়ে তুলনামূলক সহজে কথা বলতে পারেন। কারণ? অভিভাবকদের অনেকে মনে করেন তারা নিজেরাই এখনো অর্থ পরিচালনার ব্যাপারে যথেষ্ট জ্ঞান রাখেন না। তবে গবেষণা বলছে, সন্তানের অর্থনৈতিক আচরণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রভাব রাখে তার বাবা-মা।
দান করার মানসিকতা তৈরি
দান করার অভ্যাস থাকা খুবই জরুরি। এব্যাপারে আপনার সন্তানকে খুব অল্প বয়স থেকেই শিক্ষা দিতে পারেন। চার বছর বয়স থেকেই তাকে দান করার ব্যাপারে উৎসাহ দেওয়ার কাজ শুরু করা যেতে পারে। সন্তানকে সুন্দর করে বোঝাতে হবে অল্প কিছু টাকাও একজন বিপদগ্রস্ত মানুষের কাছে অনেক মূল্যবান হতে পারে।

source: NBC News
বিভিন্নভাবে সন্তানকে দান করায় উদ্বুদ্ধ করা যেতে পারে যেমন : দাতব্য প্রতিষ্ঠানে দান করে, এতিমখানায় টাকা দিয়ে, স্কুলের গরীব শিক্ষার্থীকে খাতা, কলম বা নগদ অর্থ প্রদানের মাধ্যমে কিংবা কোনো অসুস্থ ব্যক্তির চিকিৎসা খরচ জুগিয়ে ইত্যাদি।
সবুরে মেওয়া ফলে
অর্থ সংক্রান্ত শিক্ষাগুলোর মধ্যে এটাই বোধহয় ছোট বাচ্চাদেরকে শেখানো সবচেয়ে জটিল বিষয়। চার-পাঁচ বছর বয়সী বাচ্চাকে এ বিষয়টা বোঝানো নিঃসন্দেহে কঠিন।
বীজ বুনে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে হবে। বীজ থেকে চারা, চারা থেকে গাছ, সেই গাছে ফুল, তারপর পাওয়া যাবে ফল। বীজ বোনা থেকে ফল পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করার শিক্ষাটা বাচ্চাদের দেওয়া জরুরি।

source: 123rf.com
টাকা-পয়সার ব্যাপারে সবকিছু তাৎক্ষণিক ঘটবে না। পরিকল্পনা করে এগোতে হবে। ভবিষ্যতের পরিকল্পনা করে আজকে নেওয়া একটি পদক্ষেপ জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে; এই বিষয়টা সন্তানকে বুঝিয়ে দিতে হবে।
অভিভাবকদেরও নিজেদের দায়িত্ব পালন করতে হবে যথাযথভাবে। সচেতনতার সাথে অর্থ ব্যয়, অর্থ সঞ্চয় ও ভবিষ্যতের কথা ভেবে বিনিয়োগ করে সন্তানের সামনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে।
সন্তানকে মাটির ব্যাংকে বা স্বচ্ছ প্লাস্টিক জারে প্রতিদিন অল্প অল্প করে টাকার নোট বা কয়েন সঞ্চয়ের অভ্যাস করানো যেতে পারে। যত দিন যাবে ব্যাংকে বা জারে টাকা জমার পরিমাণ বাড়তে থাকবে। এটা দেখে সন্তান ‘সবুরে মেওয়া ফলে’ বিষয়ে হাতেনাতে শিক্ষা অর্জন করতে পারবে।

source: Money Crashers
বাজেট ও খরচ
সন্তাদের বয়স ছয় হলে তাকে এই বিষয়ে জ্ঞান দেওয়া যেতে পারে। সন্তানকে নিয়ে কোনো একটি বেকারিতে যান। তাকে জিজ্ঞেস করুন কোন কেকটি তার পছন্দ। দোকানির কাছ থেকে কেকের দাম জানুন। এরপর ইন্টারনেট বা অন্য কোনো উৎস থেকে সেই কেকটির রেসিপি বা তার কাছাকাছি ধরনের কোনো কেকের রেসিপি নিয়ে সন্তানকে নিয়ে হাজির হয়ে যান কোনো মুদি দোকানে।

source: Little London Magazine
কেক বানাতে কী কী উপাদান লাগবে, সেগুলোর দাম দোকানির কাছ থেকে জেনে এক এক করে টুকে নিন। সবগুলো দাম যোগ করে সন্তানকে দেখান। বেকারিতে দেখে আসা কেকের চেয়ে বর্তমান সদাইয়ের মোট দাম বেশি দাঁড়াচ্ছে নাকি কম? যদি কম হয় সদাই কিনে আনুন। বাসায় এসে সন্তানকে সাথে নিয়ে রেসিপি দেখে কেক তৈরির চেষ্টা করুন। আর যদি বেশি হয় তাহলে সন্তানকে বলুন বেকারি থেকে তুলনামূলক কম মূল্যের কোনো কেক পছন্দ করতে।
এরফলে আপনার সন্তান টাকার মূল্য বুঝবে। দোকান থেকে চট করে একটা জিনিস কিনে এনে খাওয়া আর একই পরিমাণ টাকায় (তারচেয়ে কম টাকায়) বিভিন্ন উপাদান কিনে এনে সেই জিনিসটি ঘরে তৈরি করে খাওয়ার পার্থক্যটা কোথায় তা বুঝতে পারবে।
কীভাবে নির্ধারিত বাজেটের ভেতরে চাহিদা মেটাতে হয়, বাজেট অনুযায়ী বাজার করতে হয়, অর্থ ব্যয় করতে হয় এসব ব্যাপারে হাতেনাতে শিক্ষা পাবে।
টাকা থেকে টাকা তৈরি
সহজ ভাষায় বললে : সুদ বা মুনাফা। বেনজামি ফ্রাঙ্কলিন বলেছিলেন, ‘এক টাকা বাঁচানো মানে এক টাকা উপার্জন করা।’ তাঁর কথাটি আংশিক ঠিক। এক টাকা বাঁচানো বা সঞ্চয় করা আসলে এক টাকা উপার্জনের চেয়েও বেশি কিছু, যদি সেই টাকাটা কোনো মুনাফাযুক্ত ব্যাংক অ্যাকাউন্টে রাখা হয়।
কম্পাউন্ড ইন্টারেস্ট সিস্টেমের বদৌলতে আমরা শুধু আমাদের সঞ্চয়কৃত টাকারই মুনাফা পাই না, সাথে সেই মুনাফার মুনাফাও আমাদের পকেটে আসে।

source: TreeHugger
সাত বছর বয়সী সন্তানকে কম্পাউন্ট ইন্টারেস্ট বা ব্যাংকিং জগতের মুনাফার বিষয়টি বোঝানোর জন্য অভিভাবককে একটু চালাকি করতে হবে। প্রথম দিন সন্তানকে ১ টাকা দিন। তাকে বলুন, সে যদি এই টাকাটা খরচ না করে জমিয়ে রাখে তাহলে আগামীকাল তাকে আরো ১ টাকা দেওয়া হবে। এবার দ্বিতীয় দিনে তাকে ১ টাকা দিন এবং বলুন আগামীকাল যদি সে এই ২ টাকা অক্ষত অবস্থায় দেখাতে পারে তাহলে তাকে আপনি পরদিন ৪ টাকা দেবেন (অর্থাৎ ১০০% বোনাস)!
এভাবে তৃতীয় দিনে ৪ টাকা, চতুর্থ দিনে ৮ টাকা, পঞ্চম দিনে ১৬ টাকা, ষষ্ঠ দিনে ৩২ টাকা ও সপ্তম দিনে ৬৪ টাকা দিন। এরপর সন্তানকে টাকাগুলো দেখি বুঝিয়ে বলুন কীভাবে সে ১ টাকা সঞ্চয় করে কম্পাউন্ড ইন্টারেস্ট তথা মুনাফা লাভের মাধ্যমে ৭ দিনের মধ্যে ৬৪ টাকার মালিক হয়ে গেছে! অর্থ সঞ্চয় করলে সেটা বৃদ্ধি পায়; আপনার এই পদক্ষেপের ফলে এ ব্যাপারে সন্তান পরিষ্কার ধারণা পেয়ে যাবে।
Featured Image: Debt.com
Comments 0